নিজস্ব সংবাদদাতা,হাওড়া:
অন্তরালের যোদ্ধা। 24×7 যুদ্ধ চলছে অন্তরালে। জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ। চারিদিকে ব্লাড ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে রক্ত শূন্যতা। তাই ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাঙ্কই মানুষকে ভরসা যোগাচ্ছে। কোভিড ১৯। নাম শুনলেই আতঙ্ক গ্রাস করছে। বিশ্বজুড়ে মহামারী আজ। করোনার বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকরা। কিন্ত, এর অন্তরালেও যুদ্ধ করছেন বেশ কয়েকজন যুবক। নিজেদের জীবনকে বাজি রেখেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছেন হাওড়ার একদল ছাত্র-যুব ও সমাজ কর্মী।
যে পুলিশ সুরক্ষা দিতে রাস্তায় নেমেছেন। যে পুলিশ রক্তদান করছেন তাদের কুর্নিশ জানাতেই হবে। কিন্তু, পুলিশের রক্তে কতজনকে বাঁচানো যাবে? তাই মানুষের কাছে ভরসা জীবন বাজি রেখে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা যুবকরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রাক্কালে শাশ্বত পাড়ুই, অপর্ণা পুরকাইত, উজ্জ্বল দাস, রেজাউল করিম, সুলতানা খাতুন, দেবাশিস চক্রবর্তী, সমীর প্রামাণিক, শাহজাহান মোল্লা, সুদীপা ব্যানার্জী, শুভদীপ সাহু, সুরজিৎ চক্রবর্তী, শুভজিৎ দোলুইরা ছাত্র- যুবসহ সমাজসেবী মানুষকে একজোট করে 'BLOOD DONOR' হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেন মুমূর্ষু রোগীদের পাশে দাঁড়াতে। প্রতিদিন সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে রক্তদাতাদের সঙ্গে রোগীর সরাসরি যোগাযোগ ঘটিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে মুমূর্ষু রোগীকে রক্ষার লড়াই করছে ব্লাড ডোনর হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের সদস্যরা। এখনও পর্যন্ত ১৫৬ জন গ্রুপের সদস্য হয়েছেন। এই গ্রুপের রক্তদাতাদের নিজেদের মধ্যে ডোনর না থাকলে গ্রুপ সদস্যরা ফেসবুকে রিকুইজিশন দিয়ে রক্তদাতা খোঁজার কাজ করছেন।
এই তো সেদিন দক্ষিণ কলকাতার কোঠারি হসপিটালে মূর্শিদাবাদের বিশিষ্ট কবি নাসের হোসেইন এর চিকিৎসার জন্য বি পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন হয়। গাড়ি ছিল না। উবের বুক করে গ্রুপ সদস্য বালির রবীন ব্যানার্জী রক্তদান করে আসেন কবি নাসের হোসেইন এর জন্য।
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত গরিব পরিবারের সন্তান শবনম পারভিনের ব্লাড ট্রান্সফিউশন এর জন্য এ পজিটিভ রক্ত মিলছিল না। ব্লাড ডোনর গ্রুপ সদস্য সেখ মিজানুরের কাছ থেকে খবর পেয়ে ছাত্রী সঞ্চিতা বিশ্বাস এগিয়ে আসেন। সঞ্চিতা তার জীবনের প্রথম রক্তদান করে শবনমের সঙ্গে রক্তের বন্ধনে নিজেকে যুক্ত করে শবনমের প্রাণশক্তি দিতে সহযোগিতা করেন। আবার রমজান মাসের রোজা রেখেও গরিব পরিবারের সন্তানকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন অনেক যুবক।
'Blood Donor' হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন দক্ষিণ ২৪পরগণার বজবজের আনন্দ কুমার ঝা। বজবজের রক্তদাতাদের সঙ্গে নিয়ে বজবজ ব্লাড ডোনর্স হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ তৈরি হয়েছে। সেই গ্রুপের বর্তমান সদস্য ১৪৬ জন। বজবজ ব্লাড ডোনর্স গ্রুপ সদস্যরা রক্তদান করে চলেছেন প্রতিদিন।
BLOOD DONOR হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্লাড ব্যাঙ্ক গুলিতে রক্তশূন্যতা। কোভিডের মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্য বিধি মেনে কেবল দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। দৈহিক দূরত্ব বজায় রেখে সম্মুখ সমরে যোদ্ধাদের যুদ্ধের অন্তরালেও মানুষ বাঁচানোর যুদ্ধ চালাচ্ছেন ব্লাড ডোনর হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের সদস্যরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রাক্কালে ব্লাড ডোনর হোয়াটস গ্রুপটি তৈরি করি। আমাদের সদস্যরা রক্তদান করে রক্তের অভাব পূরণ করছেন ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে। একজনও মানুষকে রক্তের অভাবে মৃত্যুর পথে হাঁটতে দেবো না। এই অঙ্গীকারেই আমাদের লড়াই জারি আছে।